হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড গতকাল শনিবার একটি ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে গাজায় জিম্মি এক ইসরায়েলি নারী সেনা তার দুর্ভোগের কথা জানিয়ে নেতানিয়াহু সরকার ও সেনাবাহিনীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। লিরি আলবাগ নামের ওই সেনা (১৯), বলেছেন, বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা তাদের জীবন আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
ভিডিও বার্তায় লিরি বলেন, ‘আমি গাজায় ৪৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্দি। আমার পুরো জীবন এখনো সামনে পড়ে আছে, কিন্তু এখানে এসে তা থেমে গেছে।’ তিনি জানান, ‘আজ নতুন বছরের শুরু, বিশ্ব উদযাপন করছে। কিন্তু আমাদের জন্য এটি অন্ধকারময় নতুন বছরের সূচনা। আমরা সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। এমনকি বিশ্বও আমাদের দুর্ভোগ ভুলে গেছে।’
তার সহকর্মীর ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে লিরি বলেন, সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানে ওই সহকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি দুঃস্বপ্নে বেঁচে আছি। আমাদের জীবন সেনাবাহিনীর পিছু হটার ওপর নির্ভরশীল।’
সরকারের প্রতি তীব্র প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যদি আপনার প্রিয়জনরা বন্দি থাকত, তবে কি এই যুদ্ধ এতদিন চলত? আপনারা কি আমাদের মেরে ফেলতে চান?’
কাঁদতে কাঁদতে লিরি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজকে বলেন, ‘আপনি আমার বাবাকে চেনেন। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন, তিনি আর কখনো তার মেয়েকে আলিঙ্গন করতে পারবেন না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে লিরি আরও বলেন, ‘আমাদের জীবন আপনাদের কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। আমরা আপনাদের হাতে খেলনা মাত্র। সামরিক অভিযান চালিয়ে আমাদের মুক্ত করা সম্ভব নয়, এটি ব্যর্থ হবে। আপনারা তা জানেন।’
তিনি গাজায় চলমান বোমা হামলারও সমালোচনা করে বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা বেপরোয়া বোমাবর্ষণের মধ্যে বেঁচে আছি। কোনো আশ্রয় ছাড়াই এমন পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না।’
ভিডিও বার্তার শেষে লিরি তার পরিবারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমার কিছু হলে আমাকে মনে রাখবেন। আমার কবরের ওপর লিখে রাখবেন, ‘এই সরকারের জন্যই আমি মারা গেছি।’ দয়া করে আমার মুক্তির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা করুন।’
ভিডিওতে দেখা গেছে, বন্দি লিরি মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি তার এবং অন্য বন্দিদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েলের সম্প্রচার সংস্থা জানিয়েছে, কাসসামের এই ভিডিওটি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। কারণ, লিরি একজন নারী সেনা এবং তার বন্দি হওয়ার ঘটনা ইসরায়েলে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভিডিওটি প্রকাশের পর লিরির মা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন।’
গত এক মাসে হামাস একাধিকবার বন্দি ইসরায়েলি সেনাদের ভিডিও প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে মেতান তসানগাওকার নামের আরেক বন্দি নেতানিয়াহুকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হামাস দাবি করে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের কাছে বন্দি থাকা ৩৩ জন সেনা নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের বন্দি সেনাদের মুক্তির দাবিতে হামাসের পক্ষ থেকে বারবার ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের সমালোচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বন্দিদের পরিবারগুলোও সরকারের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
সূত্র : আল জাজিরা
