সুদানে চলমান যুদ্ধের কারণে এ বছর ১ লাখ ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় শনিবার পরীক্ষা শুরু হলেও আয়োজনের ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। পরীক্ষায় বসার সুযোগ না পেয়ে হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দানা বেঁধেছে।
যুদ্ধের কারণে আর্থিক সমস্যায় পড়া শিক্ষার্থীদের একজন রাশা মোহাম্মদ। পাশের রাজ্যে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলেও অর্থের অভাবে যেতে পারেননি তিনি। রাশা বলেন, ‘দেড় বছর ধরে স্বপ্ন দেখছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার, কিন্তু বাড়িতে আটকা পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সম্ভব হলো না। এটা কি আমার অপরাধ যে আমাকে এই পরিস্থিতির শিকার হতে হলো?’
সুদানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মোট ৩ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছে। এটি মোট নিবন্ধিত শিক্ষার্থীর ৭০ শতাংশ। তবে যুদ্ধের কারণে দক্ষিণ ও পশ্চিম কুরদুফানসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
যুদ্ধের কারণে হাজারো শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন নম্বর হারিয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে আরও অনেকে।
শিক্ষার ব্যাপারে সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। স্বাধীন শিক্ষক সংগঠনের মুখপাত্র সামি আল বাকার বলেন, ‘এ ধরনের পরীক্ষার আয়োজন মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এতে শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের বিভাজন আরও গভীর হবে। হাজারো শিক্ষার্থীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা কোনোভাবেই ন্যায়সংগত নয়।’
তিনি আরও বলেন, সরকারের উচিত ছিল যুদ্ধে জড়িত পক্ষগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে একটি নিরাপদ পরিবেশে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে সরকার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বললেও পরিস্থিতি ভিন্ন। রাজধানী খার্তুমসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি থেকে গেছে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি, তাদের জন্য আগামী বছরের মার্চে আরেকটি সুযোগ রাখা হয়েছে।
ইউনিসেফের তথ্যমতে, চলমান সংঘাতের কারণে সুদানের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দেশটির এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সূত্র : আশ শারকুল আওসাত
