তিউনিসিয়ার ৩৮ বছর বয়সী সার্জন সাফুয়ান আল-বানানি ছিলেন প্রথম তিউনিসিয়ান চিকিৎসক, যিনি গাজায় মানবিক মিশনে যোগ দেন। ইসরায়েলের দীর্ঘ ১৪ মাসের হামলায় আহতদের চিকিৎসা করতে সেখানে গিয়ে তিনি ধ্বংসস্তূপ আর মানবিক বিপর্যয়ের যে চিত্র দেখেছেন, তা তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। গাজায় কাটানো ১৭ দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সাফুয়ান বলেন, ‘গিয়েছিলাম চিকিৎসা করতে, কিন্তু ফিরে এসেছি গভীর মানবিক ক্ষত নিয়ে। শোনা আর দেখা কখনোই এক নয়।’
সাফুয়ান জানান, একটি বহুজাতিক চিকিৎসক দলের সঙ্গে তিনি গাজায় প্রবেশ করেন। বেসরকারি সংস্থাগুলোর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ প্রবেশ সম্ভব হয়। তবে উত্তর গাজার পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। সেখানে প্রতিদিনই তীব্র বোমাবর্ষণ চলে। সংবাদমাধ্যমে যা দেখানো হয়, তা বাস্তব অবস্থার মাত্র ১০ শতাংশও নয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন এতটাই চরমে পৌঁছেছিল চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের প্রবেশ পর্যন্ত আটকে দেওয়া হয়। এমনকি চিকিৎসা টিমের গাড়িগুলোও হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। সাফুয়ান বলেন, ‘গাজায় কেউ নিরাপদ নয়। এমনকি হাসপাতালও শত্রুপক্ষের হামলার আওতায়।’
উত্তর গাজার পরিস্থিতি নিয়ে সাফুয়ান বলেন, ‘সেখানে জীবনযাপনের ন্যূনতম সুযোগও নেই। হাসপাতালে মৌলিক চিকিৎসা সরঞ্জামকে বিলাসিতা মনে হয়। আহতদের জীবন বাঁচাতে সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। অনেক চিকিৎসককে দেখেছি, যারা একদিকে আহতদের চিকিৎসা করছেন, অন্যদিকে নিজেদের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য খাদ্য ও পানির সন্ধান করছেন।’
তিনি বলেন, গাজার শিশুদের জন্য মিষ্টি পানি ছিল সবচেয়ে বড় চাওয়া। স্বাস্থ্যসেবার ট্রাক দেখলেই শিশুরা দৌড়ে আসত, এক বোতল পানি পাওয়ার আশায়। এই দৃশ্যগুলো আমার হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে,’।
ইসরায়েলি বাহিনী চিকিৎসকদের উপস্থিতি মেনে নিতে পারেনি। তাদের সরে যাওয়ার হুমকি দেয়। ফলে সাফুয়ানের দল ১৭ দিন কাজ করেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়। তবে এই অল্প সময়েও তিনি গাজার মানুষের অদম্য মনোবল প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ, ধ্বংস আর অবরোধ সত্ত্বেও গাজার মানুষ বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। তারা জীবনের প্রতি অসীম ভালোবাসা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
সাফুয়ান জানান, গাজা সফর তার জীবনের একটি বড় মোড়। গাজা আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে। যা আমরা সহজলভ্য মনে করি, তা অন্যদের জন্য হতে পারে একটি দুর্লভ স্বপ্ন।’ গাজা থেকে ফিরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আমার মানবিক দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারিনি। তবে আশা করি, আমার এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে আরও তিউনিসিয়ান চিকিৎসকদের গাজায় যাওয়ার পথ সুগম করবে।’
গাজার মানুষের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মানুষগুলো সত্যিই অসাধারণ। তারা ধ্বংসের মাঝেও জীবনকে ভালোবাসে। গাজা আমাকে নতুন করে জীবনকে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে।’
সূত্র : আল আরাবী আল জাদিদ