চার দশকেরও বেশি সময় পর মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি নাগরিক ওয়ালিদ বারাকাত। ৪২ বছর বন্দি জীবনের পর আজ তিনি ফিরে এসেছেন পরিবারের কাছে। এই দীর্ঘ সময় কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে কাটিয়ে, পরিবারের স্নেহ-ভালোবাসার উষ্ণতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেটেছে তার জীবন।
১৯৫৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর জেরুজালেমের উত্তরের ছোট গ্রাম নবি সামুয়েলে জন্ম ওয়ালিদের। জীবনের সূচনা ভালোভাবেই হয়েছিল। ১৯৮১ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, পরের বছর কন্যাসন্তানের বাবা হন। কিন্তু ১৯৮২ সালের ৩১ অক্টোবর দামেশক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর শুরু হয় এক দুঃসহ যাত্রা।
ওয়ালিদ বারাকাতের জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায় শুরু হয় সিরিয়ার তাদমুর কারাগারে। টানা ১৪ বছর তিনি একক একটি অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দি ছিলেন। সেখানে তার পরিচয় মুছে ফেলা হয়, তাকে ডাকা হতো শুধু একটি নম্বরে।
এই সময়ে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বহুবার মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও বেঁচে ফিরেছেন। বন্দি জীবনের ৩০ বছর পর তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। এত বছর পেরিয়েও তার মুক্তি ছিল অনিশ্চিত।
যে বছর ওয়ালিদ বন্দি হন সেবছর তার কন্যাসন্তানের বয়স ছিল মাত্র কয়েক মাস। সন্তানের শৈশব, বেড়ে ওঠা—কিছুই দেখতে পাননি তিনি।
তবে বাস্তবতা এর চেয়েও বিস্ময়কর। ৪২ বছর পর যখন মুক্তি পেলেন, তখন তার মেয়ে কেবল পূর্ণবয়স্ক নন, তিনি নিজেও মা। ওয়ালিদ এখন শুধু পিতা নন, দাদা ও নানা।
কারাগারের দরজা পেরিয়ে মুক্ত পৃথিবীতে পা রেখেছেন ওয়ালিদ বারাকাত। ৪২ বছরের বন্দিজীবনের দাগ তার শরীরে স্পষ্ট। নেই কোনো পরিচয়পত্র, যা তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। এখন তিনি লড়াই করছেন তার আইনি পরিচয় ফিরে পেতে এবং নতুন করে জীবন শুরু করতে।
জর্ডানে থাকা পরিবারের বড় একটি অংশ তাকে সাদরে গ্রহণ করেছে। দীর্ঘ ৪২ বছর পর তাদের ভালোবাসা আর স্নেহের উষ্ণতায় তিনি জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করছেন।
ওয়ালিদ বারাকাতের এই গল্প শুধু একজন ব্যক্তির জীবনসংগ্রাম নয়, এটি অন্ধকারের বিপরীতে আশার আলো ধরে রাখার অনন্য উদাহরণ। ৪২ বছর পরও পরিবারের কাছে ফিরে আসা, মুক্ত জীবনের স্বাদ পাওয়া—এ যেন এক জীবন্ত অলৌকিক ঘটনা।
সূত্র : আল জাজিরা