মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

তালেবান শুধু যুদ্ধই করে নি তারা ম্যানপাওয়ারও তৈরি করেছে

আপনার দেখবেন যে, এই মোল্লারা কেবল যুদ্ধই করেনি। তারা ভেতরে ভেতরে দক্ষ লোকও তৈরী করেছে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পূর্বেই তারা প্রশাসনিক, সামরিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিল।
তালেবান পুলিশ
ছবি : সংগৃহিত

২০২১ সালে তালেবান কাবুলের শাসনভার ছিনিয়ে নিয়েছে। এর জন্য তাদেরকে দীর্ঘ ২০টি বছর যুদ্ধ করতে হয়েছে। এটি ছিল সম্পূর্ণ অসম ও অন্যায় ‍যুদ্ধ। একদিকে ছিল দখলদার সুপারপাওয়ার আমেরিকা। অন্যদিকে ছিল পাহাড়ি মোল্লারা। শত্রুপক্ষের হাতে ছিল আধুনিক সমরাস্ত্র। আর মোল্লাদের বুকে ছিল ঈমানি তেজ। তাদের হাতে যা-ই থাকুক না কেন!

ক্ষমতায় তারা এবারই প্রথম নয়। গত শতাব্দীর শেষ ধাপেও তারা ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু সেই ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তালেবানের প্রথম সরকার ও দ্বিতীয় সরকারের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এই তফাতগুলো বুঝতে পারলেই আপনি চমকে উঠবেন। আপনার দেখবেন যে, এই মোল্লারা কেবল যুদ্ধই করেনি। তারা ভেতরে ভেতরে দক্ষ লোকও তৈরী করেছে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পূর্বেই তারা প্রশাসনিক, সামরিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিল।

স্রেফ দখলদারদের হটানোই তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। তাদের ছিল সুস্থির লক্ষ্য— আমেরিকার দখলদার ও তার আফগানি পোষ্যদের হটিয়ে তারা নিজেরা ক্ষমতায় বসবে। গন্তব্য জানা ছিল বলেই তারা আনুষাঙ্গিক সকল দিককে সামনে রেখে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পেরেছে। যাতে প্রথমবারের মতন ভুল না হয় এবং মজবুতভাবেই তারা মসনদে বসতে পারে।

দুই.

গতকাল (২৬ অক্টবর ২০২৫) প্রথম আলো পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুফতি আবদুল মতিন কোয়ানি। তার সাক্ষাৎকারটি পড়তে পড়তেই ওপরের কথাগুলো মনে পড়ল। 

বর্তমান সময়ে যুদ্ধের প্রায় ৮০ পারসেন্টই ঘটে মিডিয়ায়। এই মিডিয়াই তালেবানের প্রতিরোধ যুদ্ধকে সন্ত্রাস বানিয়েছিল। দখলদার আমেরিকাকে তারা বসিয়েছিল হিরোর ভূমিকায়। সুতরাং তালেবান জানত, ময়দানের যুদ্ধ শেষ হলেও তাদেরকে লড়তে হবে মিডিয়ার সাথে, ক্ষমতায় বসার একেবারে প্রথম দিন থেকেই এবং সারাজীবন ধরেই। বাস্তবে ঘটছেও তা-ই। 

তবে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে তালেবান দারুণভাবে মিডিয়াকে ফেইস করছে। তারা উপস্থাপন করেছে চমৎকার কিছু স্পোকসম্যান বা মুখপাত্র। যারা একইসাথে বহুভাষী ও চমৎকার উপস্থাপক। তাদের ইংরেজি শুনে সকলেই বিস্মিত হয়েছিল। শুধু ইংরেজিই নয়, তাদের যুক্তিযুক্ত উপস্থাপনও ছিল নজরকাড়া। যা শুনলেই বোঝা যায়, এরা একদিনে তৈরী হয়নি। তাদেরকে বছরের বছর ধরে ট্রেইন আপ করা হয়েছে। ঠাণ্ডা মাথায় মিডিয়াকে কুপোকাঁত করার কৌশল তাদেরকে রপ্ত করানো হয়েছে। প্রথম আলোতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটিও তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রথম আলো তালেবান মুখপাত্রর পরিচয় দিয়ে বলছে: বহুভাষী ও শিক্ষাবিদ। 

মিডিয়া ফেইস করা বেশ জটিল একটি কাজ। কারণ মিডিয়ার লোকদের ট্রেইন আপ করানোই হয় অন্যকে জালে আটকাতে। তাদের সূক্ষ্ম চাল ধরে সমুচিত জবাব দিতে না পারলে আপনার শত কৌশলও বিশ্বের সামনে ব্যর্থ হতে পারে। ডিপ্লোম্যাসি বা কূটনীতি একটি স্বতত্র শাস্ত্র। এই শাস্ত্রে ব্যর্থতা মানেই ক্ষমতার দৌড়ে আপনার পিছিয়ে পড়া। বিশ্ব-দরবারে আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়া।

শুধু তালেবানই নয়, মুসলিম বিশ্বে লড়াইরত হামাসও কূটনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তাই বলতে বাধ্য হয়েছে, তারা (হামাস) দুর্দান্ত নেগোশিয়েটর। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আশ শারাও বেশ ভালো কথক ও উপস্থাপক। তিনিও মিডিয়াকে বেশ কৌশলী হাতে সামাল দিয়ে যাচ্ছেন।

ফিরে আসি তালেবানের কথায়। 

তালেবান শুধু যে ইন্টলেকচুয়াল তৈরী করছে, তা কিন্তু নয়। তারা সেনাবাহিনীকেও বেশ মজবুতভাবে গড়ে তুলছে। বর্তমানে প্রায় দেড় লাখের মত তালেবান সৈন্য আছে। আফগান পুলিশ আছে প্রায় দুই লাখের মতন। গোয়েন্দাসহ প্রায় সাড়ে চার লাখের মতন নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলেছে তালেবান সরকার। তবে সংখ্যার চেয়েও বিশ্বের নজড় কেড়েছে তাদের গভীর শৃঙ্খলার দিকে। (প্রথম আলো, ২৬ অক্টবর ২০২৫)

তাদেরকে কীভাবে শৃঙ্খলিত করা হয়েছে–এই প্রশ্নের জবাবে আবদুল মতিন কোয়ানি বলেন: গত এক বছরেই ১ লাখ ১০ হাজার নতুন ছেলেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্বল্প সময়ের কোর্স, দীর্ঘ সময়ের কোর্স থেকে ‘ব্রিজ কোর্স’ করানো হয়েছে। কীভাবে এই ব্যবস্থা কাজ করে, সেটা বোঝানো হয়েছে। এটা আফগানিস্তানের ভেতরে করা হয়েছে এবং দেশের বাইরেও (যেমন রাশিয়া, চীন) করা হয়েছে।

তার উত্তর শুনে প্রথম আলোর শুভজিৎ বাগচী বলেন: আপনি কি বলবেন তালেবানের প্রথম সরকারের সঙ্গে দ্বিতীয় সরকারের এটাই প্রধান তফাত– একটা শৃঙ্খলাপরায়ণ বাহিনী?

মুফতি কোয়ানির জবাব: এটা একটা গুরূত্বপূর্ণ তফাত। (প্রাগুক্ত)

তিন.

কেবল আবেগ দিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা করা যায় না– অতীতেও কখনো স্রেফ আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়নি। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও চৌকস ম্যানপাওয়ার। তালেবানের প্রথম সরকারে এই ম্যানপাওয়ারের ঘাটতি ছিল। দ্বিতীয় বারে তারা আর সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেননি।

বাংলাদেশের হুজুরদের রাজনীতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন আমি বরাবরই করি:

বাংলাদেশের হুজুরদের রাজনীতি কি শুধুই আবেগনির্ভর ও ইস্যুভিত্তিক হয়ে চলছে ? নাকি বাস্তবেই তাদের কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়? তারা কি ম্যানপাওয়ার বা দক্ষ লোকবল তৈরী করা নিয়ে সামান্যতম চিন্তাও করেছেন বা করছেন? তারা কি জানেন গন্তব্য কোথায়?