ফ্রান্সে মুসলিমদের ওপর পরিচালিত একটি অত্যন্ত বিতর্কিত জনমত জরিপ নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির অন্যতম শীর্ষ জরিপ সংস্থা Ifop-এর মাধ্যমে পরিচালিত এই গবেষণার অর্থদাতা একটি মিডিয়া কোম্পানি, যার সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) একটি স্মিয়ার ক্যাম্পেইনে (অপপ্রচার অভিযান) যোগসূত্র রয়েছে বলে জানা গেছে।
ফ্রান্সের নামকরা জরিপ সংস্থা ফ্রান্স ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক অপিনিয়ন (Ifop) কর্তৃক প্রকাশিত এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সের মুসলিমদের ইসলাম ও ইসলামপন্থার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বর্তমান অবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা। ১৮ নভেম্বর মঙ্গলবার প্রকাশিত এই জরিপে দাবি করা হয়, ১৯৮৫ সালে যেখানে ফরাসি জনসংখ্যায় মুসলিমদের অনুপাত ছিল মাত্র ০.৫ শতাংশ, ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে। ফলে ইসলাম এখন দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হিসেবে অবস্থান নিয়েছে।
জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, তরুণ মুসলিমদের মধ্যে পুনরায় ধর্মীয় পরিচয়ে প্রত্যাবর্তনের একটি প্রবণতা (re-Islamisation) স্পষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে প্রভাবিত করছে। গবেষণা অনুযায়ী, এই প্রবণতার সঙ্গে ইসলামপন্থী মতাদর্শের প্রতি সমর্থন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
Ifop-এর তথ্য অনুযায়ী, জরিপে ‘ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের তীব্রতা বৃদ্ধি, লিঙ্গ মিশ্রণের প্রশ্নে কঠোর মনোভাব এবং রাজনৈতিক ইসলামঘেঁষা রেডিক্যাল ধারার প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি’ প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষত, এতে বলা হয়েছে প্রায় প্রতি দু’জনের একজন মুসলিম (৪৬ শতাংশ) মনে করে, তারা যে দেশে বসবাস করছে সেখানে ইসলামিক আইন প্রয়োগ করা উচিত। Ifop আরও বলছে, এই তথ্যগুলো তাদের উদ্বেগকে আরও জোরালো করে, যারা মনে করে ফ্রান্সে মুসলিম জনসংখ্যা যেন একটি ‘বিকল্প সমাজ’ (counter-society) হিসেবে গড়ে উঠছে। অর্থাৎ এমন এক সমাজ, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মূল্যবোধ থেকে ভিন্ন, এমনকি কখনও তার বিপরীত ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে দৈনন্দিন জীবন সংগঠিত করতে চায়।
এই প্রবণতা সময়ের সাথেসাথে হ্রাস পাওয়ার বদলে বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মে আরও শক্তিশালী হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে নতুন একটি প্রজন্ম, যারা ক্রমশই আরও জোরালোভাবে নিজেদের মুসলিম পরিচয় প্রকাশ করতে আগ্রহী। বিশেষত এমন একটি ফরাসি সমাজের বিপরীতে, যা তাদের দৃষ্টিতে ক্রমে আরও বৈরী হয়ে উঠছে।
মুসলিমরা যেন ‘অভ্যন্তরীণ শত্রু’! ডানপন্থীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
এই জরিপটি ফরাসি গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে, বিশেষ করে রক্ষণশীল মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। তারা এটিকে মুসলিমদের পক্ষ থেকে প্রজাতন্ত্র এবং তার আইনের বিরোধিতা করার প্রমাণ হিসেবে দেখছে।
উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মেরিন ল্য পেনের ভাগ্নি ম্যারিয়ন মারেচাল ল্য পেন এই সংখ্যাগুলোকে ভয়ঙ্কর আখ্যা দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ফ্রান্স লক্ষ লক্ষ রেডিক্যাল মুসলিমদের মুখোমুখি হতে পারে, যারা শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করতে চায়।’
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট ন্যুনেজও জরিপের প্রতি পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি র্যাডিকাল ইসলামের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারি কর্মপরিকল্পনার তৃতীয় ধাপ অবিলম্বে শুরু করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক ইসলাম মোকাবিলায় নতুন আইনগত বিধান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে জাতীয় সংহতি দুর্বল করার নতুন অপরাধ ধারাও অন্তর্ভুক্তথাকবে। প্রজাতন্ত্রের আইন সর্বদা ধর্মীয় আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে, তা শরিয়াহ হোক বা অন্য কিছু।
পদ্ধতিগত ত্রুটি ও ইসলামোফোবিয়ার অভিযোগ
তবে জরিপটি প্রকাশের পরপরই এর পদ্ধতি ও ব্যাখ্যার পক্ষপাতদুষ্টতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে, এটি ইসলামোফোবিয়া এবং ইসলামভীতি সৃষ্টিকারীবয়ানের পথ তৈরি করেছে, যার উদ্দেশ্য ভয়, ঘৃণা ও বিভেদ সৃষ্টি করা।
প্যারিসের গ্র্যান্ড মসজিদের রেক্টর আক্ষেপ করে বলেছেন, এখন মুসলমানদের ধর্মচর্চাকেই হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ‘একটি সাধারণ পরিসংখ্যানকে অলঙ্কারিক কৌশলে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন ধর্মীয় অনুশীলন কঠোরতা, সেখান থেকে ইসলামপন্থী প্রভাব এবং শেষ পর্যন্ত উগ্রবাদে রূপ নিচ্ছে। এতে আধ্যাত্মিকতার চর্চাই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।’
ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করা সংস্থা ‘অবজারভেটরি অ্যাগেইনস্ট ইসলামোফোবিয়া’র সভাপতি আব্দাল্লাহ জেকরি গবেষণাটিকে নিন্দা করে বলেছেন, এটি আসলে নিরাপত্তা–কেন্দ্রিক উত্তেজনা বাড়ানো, টিভি টক শোকে উসকানিমূলক আলোচনায় ভরিয়ে তোলা এবং ইসলামফোবিকদের হাতে উপযোগী উপাদান তুলে দেওয়ার জন্যই তৈরি।
সাংবাদিক জ্যাঁ পিয়েরে অ্যাপাথি জরিপটির ব্যাখ্যাকে ফরাসি মুসলিমদের এমনভাবে চিত্রিত করার প্রচেষ্টার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেন তারা রাষ্ট্রহীন। যারা দেশের চেয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের প্রতিই বেশি অনুগত। তিনি আরও বলেন, ‘এক শতাব্দী আগেও ঠিক এভাবেই ইহুদিদের নিয়ে কথা বলা হতো।’
বামপন্থী বহু রাজনীতিকও জরিপটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জ্যাঁ-লুক মেলঁশোর নেতৃত্বাধীন ‘ফ্রান্স আনবাউড’ (LFI) পার্টি এটিকে সরাসরি একটি ‘ইসলামোফোবিয়া-নির্ভর প্রতারণা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
LFI-এর সংসদ সদস্য পল ভ্যানিয়ার মন্তব্য করেন, ‘আবারও তরুণ মুসলিমদের এমনভাবে আঙুল তুলে দেখানো হচ্ছে যেন তারা দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো শত্রু, জাতির জন্য এক ধরনের সম্ভাব্য হুমকি।’ তিনি অভিযোগ করেন, এই জরিপের কেন্দ্রে রয়েছে এক ধরনের ঘৃণ্য মিশ্রণপ্রবণতা (foul conflation), যার উদ্দেশ্য লাখো ফরাসি নাগরিককে সম্ভাব্য উগ্র ইসলামপন্থী বা সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করা।
জরিপের পদ্ধতি নিয়েও তীব্র প্রশ্ন উঠেছে। পদ্ধতিগত ত্রুটির মধ্যে সবচেয়ে বড় সমালোচনা এসেছে নমুনার আকার নিয়ে। মাত্র ১,০০৫ জন মুসলিম পরিচয়দানকারী ব্যক্তির ওপর চালানো এই জরিপের ফলাফলের প্রতিনিধিত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সমালোচকরা মনে করেন, এটি বৃহৎ জনসংখ্যার তুলনায় একেবারেই অপপ্রতিনিধিত্বমূলক।
উদাহরণস্বরূপ, হিজাব পরিধানকারী নারীর সংখ্যা নমুনায় ছিল মাত্র ১৪৯ জন। অথচ সেই ভিত্তিতেই Ifop দাবি করেছে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রতি দু’জনে একজন, অর্থাৎ ৪৫ শতাংশ নারী বর্তমানে হিজাব পরেন, এবং এটিকে তারা লিঙ্গ-ভিত্তিক বিচ্ছিন্নতার (gender separatism) প্রমাণ হিসেবে দেখিয়েছে, যা নারী-দেহকে সমাজ থেকে আড়াল করার প্রবণতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
এছাড়া উপস্থাপনার ভঙ্গিতে অস্পষ্টতা ও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত, নির্দিষ্ট প্রবণতাকে অতিরঞ্জিত করতে শতাংশের যোগসাজশ এবং ব্যবহৃত শব্দের পরিষ্কার সংজ্ঞার অভাব— এসব গুরুতর ত্রুটির কারণে জরিপটি আরও সমালোচিত হয়েছে।
সাক্ষাৎকারদাতাদের সামনে মুসলিম ব্রাদারহুড, সালাফি বা ইসলামিজম, এসব শব্দ ব্যবহার করা হলেও এর কোনোটিরই সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি, যা জরিপের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তোলে। এমনকি ‘শরিয়াহ’ নিয়ে উপসংহার টানলেও জরিপকারীরা প্রশ্নপত্রে এই শব্দটি ব্যবহারই করেননি; বরং এর পরিবর্তে তারা ‘ইসলামিক আইন’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন। জরিপে যে ৪৬% মানুষ শরিয়াহ প্রয়োগের পক্ষে বলা হয়েছে, তা আসলে দুই ভিন্ন শ্রেণির মানুষের যোগফল। ১৫ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণভাবে ইসলামি আইন প্রয়োগের পক্ষে এবং ৩১ শতাংশ মানুষ আংশিক ইসলামি আইন প্রয়োগ ও দেশের আইনি কাঠামোর সঙ্গে অভিযোজনের পক্ষে। এই দুই ভিন্ন উত্তর একত্র করেই ৪৬ শতাংশের চিত্র তৈরি করা হয়েছে, যা সমালোচকদের মতে জরিপের ব্যাখ্যায় গুরুতর বিকৃতি সৃষ্টি করেছে।
জরিপের পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে আমিরাতের গোয়েন্দা সংস্থার যোগসূত্র
জরিপটি নিয়ে উঠা সমালোচনার একটি বড় অংশ এর পৃষ্ঠপোষককে ঘিরে। বহু পর্যবেক্ষক আঙুল তুলেছেন এর অর্থায়নকারী ম্যাগাজিন ইক্রান ডি ভেইল (Écran de Veille) বা স্ক্রিন ওয়াচ-এর দিকে, যা নিজেকে ধর্মান্ধতা প্রতিরোধের মাসিক সাময়িকী হিসেবে পরিচয় দেয় এবং এটি গ্লোবাল ওয়াচ অ্যানালাইসিস নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত হয়।
এই দুটি গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় বিষয়বস্তু প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিবদ্ধ ইসলামপন্থার সমালোচনার দিকে, বিশেষত মুসলিম ব্রাদারহুড ও এর সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর (যেমন ফিলিস্তিনি হামাস) বিরুদ্ধে। নিয়মিতভাবে তারা কাতারকেও সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু করে। খবরে আরও জানা যায়, এই দু’টি প্ল্যাটফর্ম অর্থায়ন পায় কান্ট্রিজ রিপোর্টস পাবলিশিং নামের যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি কোম্পানি থেকে, যা কার্যত একটি শেল কোম্পানি, যারা শেয়ারহোল্ডারদের পরিচয় গোপন রাখে এবং রাজনৈতিক ইসলাম ও কাতারবিরোধী অন্যান্য প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত।
ফরাসি পত্রিকা Liberation-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রকাশনা পরিচালক (Director of publication) আতমান তাজাঘার্ত এবং তাঁর বেশ কিছু সহলেখকের নাম উঠে আসে বৃহৎ পরিসরের এক প্রভাব-বিস্তৃতি (interference) ও ভ্রান্ততথ্য প্রচারণার মামলায়। অভিযোগ আছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সুইস গোয়েন্দা সংস্থা Alp Services-এর মাধ্যমে ফ্রান্সে এই প্রচারণা পরিচালনা করেছিল।
২০২৩ সালের মার্চে Mediapart পত্রিকা এই অপপ্রচার পরিচালনার তথ্য ফাঁস করে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করা এবং কাতারবিরোধী ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার করা। একইসঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুড ও তার সংযুক্ত সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মিথ্যা প্রচারণা চালানো; সংযুক্ত আরব আমিরাত যাদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
Mediapart-এর সাংবাদিক আন্তন রুজে লেখেন: ‘“এই Ifop গবেষণার বিষয়ে যে প্রেক্ষাপটটি কখনোই উল্লেখ করা হয় না তা হচ্ছে; এর স্পন্সর, Global Watch Analysis কোম্পানির সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্ক রয়েছে, যা Mediapart দ্বারা ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।”
কয়েক মাস পর ফরাসি মিডিয়া এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চালায়, যাতে ইউরোপের ১৮টি দেশের ১,০০০-এরও বেশি ব্যক্তি এবং শত শত সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যাদের মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই সমস্ত লক্ষ্যবস্তু পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল সুইস গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান Alp Services-এর মাধ্যমে।
আবুধাবি সিক্রেটস নামে পরিচিত এই অনুসন্ধানে দেখা গেছে আমিরাতি কর্তৃপক্ষ এই প্রচারণায় অন্তত ৫.৭ মিলিয়ন ইউরো (৬.৫ মিলিয়ন ডলার) খরচ করেছে। সুইস সংস্থা যখন শনাক্ত ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করে তা আমিরাতি গোয়েন্দা সংস্থার হাতে পৌঁছে দিয়েছে, তখন গোয়েন্দারা প্রেস প্রচারণা, তাদের সম্পর্কে প্রকাশিত ফোরাম, ভুয়া প্রোফাইল তৈরি এবং উইকিপিডিয়া পেজ পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের আরও লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম হয়েছে।
Mediapart পত্রিকার মতে, ফ্রান্সেও প্রায় ২০০ ব্যক্তি এবং ১২০ প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেনোয়েত হামন, বামপন্থী দল LFI পার্টি এবং জাতীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র (National Center for Scientific Research)। জরিপ সম্পর্কে Libaration-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রকাশনা পরিচালক আতমান তাজাঘার্ত তাদের সাথে “বিদেশি হস্তক্ষেপের কোনো অভিযোগ নেই” বলে উড়িয়ে দেন এবং Countries Reports Publishing-এর পেছনে কারা আছে তা প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, কোম্পানিটি ২০২২ বা ২০২৩-এ Ecran de Veille-এর অর্থায়ন বন্ধ করেছে এবং এখন এটি স্বনির্ভর।
এদিকে Ifop মিডিয়াপার্টকে জানায়, কমিশনিং বডি অন্যান্য মিডিয়া আউটলেটের মতো বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই জরিপে অংশগ্রহণ করেছিল, কিন্তু তারা প্রশ্নের শব্দ ও ভাষা সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বহন করে না। এবং প্রকাশের আগে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করেনি।
‘মিডলইস্ট আই’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এবিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে যোগাযোগ করেছিল, তবে এ সংবাদ প্রকাশের সময় পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
যদিও এই তথ্য উদঘাটন বামপন্থী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বামপন্থী LFI–এর সাংসদ পল ভ্যানিয়ার এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “আমাদের স্বদেশী মুসলিমদের কলঙ্কিত করার এই কার্যক্রম, যা Ifop-এর দ্বারা পরিচালিত এবং ল্য পেন ও সমগ্র ফরাসি উগ্র-ডানপন্থী মহল দ্বারা প্রশস্ত করা হয়েছে, এটি এমন একটি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল, যা আমিরাতি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।”
তার সহকর্মী ক্লেমন্স গুটে মন্তব্য করেন, “আমরা কতদিন বিদেশি শক্তিকে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর এবং ফরাসিদের একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করার সুযোগ দেব? কীভাবে একসময়ের সম্মানিত একটি জরিপ সংস্থা এতে অংশগ্রহণ করতে পারে? আর মিডিয়া কীভাবে এমন একটি কর্মকাণ্ড সম্প্রচার করতে পারে?”
এমনকি পূর্বে এই ধরনের প্রচারণায় যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সম্প্রতি আবার ফ্রান্সে হস্তক্ষেপের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
২০ অক্টোবর অনুসন্ধানী গণমাধ্যম L’Informe জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ট্র্যাকফিনের (Tracfin) একটি তদন্ত প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে। এই তদন্তের লক্ষ্য ছিলেন ফরাসি সংসদ সদস্য কার্লোস মার্টেন্স বিলোঙ্গো, যিনি LFI-এর সদস্য এবং কিছু নীতির কারণে আরব আমিরাতের সমালোচনা করেছিলেন। L’Informe জানিয়েছে, ট্র্যাকফিন ফ্রান্সের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা, যা অর্থপাচার তদারকি করে। তারা আমিরাতের চাপের ফলে এমন একটি নোট তৈরি করেছিল, যা ত্রুটিপূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরা ছিল।
বিলোঙ্গো এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বিদেশি হস্তক্ষেপের পটভূমিতে এটি এক প্রকৃত কেলেঙ্কারি।” তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, বিষয়গুলো মিথ্যা নিন্দা এবং বিদেশি শক্তির সঙ্গে আঁতাত হিসেবে উল্লেখ করেন।
সূত্র: মিডলইস্ট আই











