হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ারের শাহাদাতের পর তাঁর কাছে পাওয়া সামগ্রী নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছিল ইসরায়েলি গণমাধ্যম। ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়,ইয়াহইয়া সিনওয়ারের ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা একটি পিস্তল আসলে ছিল এক ইসরায়েলি অফিসারের অস্ত্র, যে ২০১৮ সালে গাজায় এক অভিযানে নিহত হয়।
ইসরায়েলি চ্যানেল ১৪ জানায়, ইয়াহইয়া সিনওয়ারের শাহাদাতের পর তার কাছে যে পিস্তলটি পাওয়া যায়, সেটি মাহমুদ খাইরুদ্দিন নামে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার। তিনি ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং ২০১৮ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস এলাকায় একটি গোপন অভিযানে অংশ নিয়ে নিহত হন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাহমুদ খাইরুদ্দিন ছিলেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্পেশাল অপারেশন ইউনিটের অফিসার। গাজার ভেতরে অনুপ্রবেশ করে একটি গোপন মিশনে অংশ নেওয়ার সময় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর তিন বছরেরও বেশি সময় তার পরিচয় ও দাফনের স্থান গোপন রাখা হয়েছিল।
শহিদ ইয়াহইয়া সিনওয়ার জীবিত অবস্থায় বিভিন্ন বক্তৃতায় প্রায়ই প্রকাশ্যে এই পিস্তলটি উঁচু করে দেখাতেন। তিনি ইসরায়েলকে কটাক্ষ করে বলতেন, এটি এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার অস্ত্র, ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যর্থ অভিযানের প্রতীক। এই অস্ত্র প্রমাণ করে গাজার ভেতরে ইসরায়েলের গোপন মিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।

ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালের নভেম্বরে। সেদিন ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর একটি দল গোপনে খান ইউনুস শহরে অনুপ্রবেশ করে। হামাসের যোদ্ধারা তাদের শনাক্ত করার পর দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। ইসরায়েলি বাহিনী তখন তাদের সদস্যদের উদ্ধারে এলাকাজুড়ে তীব্র গোলাগুলি চালায় এবং ‘আগুনের বেষ্টনী’ তৈরি করে দলটিকে সরিয়ে নেয়।
পরে হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের তদন্তে জানা যায়, ইসরায়েলি দলটি হামাসের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়িপাতার যন্ত্র বসানোর চেষ্টা করছিল। মিশন শেষ করে ফেরার পথে তারা ধরা পড়ে। এরপর হামাসের প্রকৌশলীরা যখন যন্ত্রগুলো খুলতে যায়, তখন সেগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটে এবং ছয়জন শহিদ হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাস যাতে ওই যন্ত্রগুলো বিশ্লেষণ করতে না পারে, সেজন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দূর থেকে সেগুলো বিস্ফোরণ ঘটায়।
গাজা থেকে সরে যাওয়ার সময় হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি দলটিকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে হামাসের তিন যোদ্ধা শহিদ হন। পরে ভারী গোলাগুলির আড়ালে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সদস্যদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
হামাস এই অভিযানের নাম দেয় হাদ্দুস সাইফ বা তলোয়ারের ধার। পরবর্তীতে তারা ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করে। ওই ঘটনার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কয়েক দিনের তীব্র সংঘর্ষ হয়, যা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে থামে।
সূত্র: আল জাজিরা, ইরাম নিউজ





