মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সিরিয়ায় যেভাবে ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দখলদার ইসরায়েল

প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত বিভাজনের বীজ বপন করা হয়েছে। লক্ষ্য— এই অঞ্চলকে টুকরো করে ফেলা।
সামরিক বিশ্লেষক আহমাদ আশ শারিফি
সামরিক বিশ্লেষক আহমাদ আশ শারিফি। ছবি : আল জাজিরা

সিরিয়া বর্তমানে বিভাজনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে এক ভয়াবহ বিপদের দিকে— এরকম সতর্কবার্তা দিয়েছেন ইরাকি কৌশলবিদ ও সামরিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আহমদ আশ শারিফি। তাঁর ভাষ্য, দক্ষিণ সিরিয়ার সুয়াইদা প্রদেশে সীমান্ত ভাঙার প্রচেষ্টা আসলে ভৌগোলিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কৌশল মাত্র।

আল জাজিরায় দেওয়া সম্প্রতি এক বিশ্লেষণে ড. শারিফি বলেন, ইসরায়েলের চলমান হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। বরং এটি বহু আগেই পরিকল্পিত তথাকথিত ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ প্রকল্পের বাস্তবায়নের অংশ। তাঁর অভিযোগ, একদিকে ইসরায়েল দ্রুজ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার কথা বলছে, আবার একইসঙ্গে রাজধানী দামেস্কে বোমা ফেলছে।

ড. শারিফির মতে, এই হামলার পেছনে রয়েছে দুইটি উদ্দেশ্য—একদিকে সিরিয়ার সামরিক শক্তিকে দুর্বল করা, আর অন্যদিকে তুরস্ককে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া। কারণ তুরস্ক সিরিয়ার পুরোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সেনাশক্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে।

গতকাল বুধবার ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একাধিক বিমান হামলা চালায়। এতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তর এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের আশপাশের এলাকা লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এ ছাড়া ইসরায়েল গোলান মালভূমিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনেরও ঘোষণা দিয়েছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজদের রক্ষা করতে এসব ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে একইসঙ্গে তারা সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ইঙ্গিতও দিয়েছে। ওইদিন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, মাজদাল শামস সীমান্ত দিয়ে কয়েকজন ইসরায়েলি নাগরিক সিরিয়ায় ঢুকে পড়েছে এবং তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

বহু পুরোনো পরিকল্পনার বাস্তব রূপ

ড. শরিফির বিশ্লেষণ, এই পরিকল্পনার শিকড় বহু পুরোনো। তাঁর ভাষায়, ইসরায়েলি তত্ত্ব অনুযায়ী গোটা অঞ্চলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগত রাষ্ট্রে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিওনের নীতি ‘প্রান্তে টান’ (Periphery Doctrine) অনুযায়ী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ছোট ছোট রাষ্ট্র তৈরি করে পুরো অঞ্চলে একমাত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসরায়েল। কারণ, কোনো রাষ্ট্রকে দুর্বল করতে হলে সেখানকার সংখ্যালঘুদের উত্তেজিত করে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে হয়। এখন ঠিক সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করছে ইসরায়েল।

অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল

ড. শারিফির ভাষ্য, প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত বিভাজনের বীজ বপন করা হয়েছে। লক্ষ্য— এই অঞ্চলকে টুকরো করে ফেলা। তাঁর মতে, ইসরায়েলের দৃষ্টিতে দক্ষিণ সিরিয়ার দারা, সুয়াইদা ও কুনেইত্রা প্রদেশ তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কৌশলগত অঞ্চল। এমনকি ইরাকের ফালুজা পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তার প্রভাব বিস্তৃত।

একক কণ্ঠস্বর যথেষ্ট নয়

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে ড. শারিফি উল্লেখ করেন, গোটা অঞ্চলে কোনো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেই। তাঁর মতে, বিভিন্ন রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ সংকটে বিপর্যস্ত। ফলে তারা একসঙ্গে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না।

মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি আঞ্চলিক শক্তি তুরস্ক, কাতার ও ইরান এর মধ্যে ড. শারিফি কাতারকে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সচেতন রাষ্ট্র হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, কাতার এখনো ফিলিস্তিন ইস্যুতে সংলাপ ও সমঝোতার পথে রয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, একক কণ্ঠস্বর যথেষ্ট নয়।

ড. শারিফি বলেন, যদি রাজনৈতিকভাবে সঠিক বিশ্লেষণ করা হতো, তাহলে এই লড়াই শুধু সামরিক নয়, বরং কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ময়দানেও প্রতিফলিত হতো।

সর্বশেষ