মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

পাকিস্তানে আফগান অভিবাসীদের ওপর কঠোর দমননীতি

পাকিস্তানে আফগান অভিবাসীদের ওপর কঠোর দমননীতি। ছবি : মধ্যপ্রাচ্য

রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান বর্তমানে আফগান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। যেসব আফগান দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার আগ্রাসন, দারিদ্র্য ও অস্থিরতা থেকে বাঁচতে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, আজ তারাই চরম সহিংসতা, হয়রানি ও জোরপূর্বক বহিষ্কারের শিকার হচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান সরকার হাজারো আফগান নাগরিককে— এমনকি যাদের বৈধ কাগজপত্রও রয়েছে— দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করছে। অনেকেই, যারা বহু বছর ধরে সৎভাবে জীবনযাপন করছিলেন, কর দিচ্ছিলেন এবং স্থানীয় সমাজে অবদান রাখছিলেন, তারা কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হঠাৎ বহিষ্কারের মুখোমুখি হচ্ছেন। বহু অভিবাসীকে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে; বিচার ছাড়াই তাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিও ও তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক আফগান পরিবারের ঘরে অভিযান চালিয়ে লুটপাট করছে। যেসব আফগান নাগরিক বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে গেছেন, তারা অভিযোগ করেছেন—তাদের অর্থ, যানবাহন ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ঘুষ না দিলে মারধর ও গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব ঘটনাকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। বেলুচিস্তান, সিন্ধ ও পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে পাওয়া নানা প্রতিবেদন বলছে, অনেক বৈধ অভিবাসীকেও কোনো কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এমনকি দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও এসব অভিযানে অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।

এই কঠোর নীতির কারণে হাজারো পরিবার এখন গৃহহীন হয়ে পড়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। নারীদের নিরাপত্তা, শিশুদের ভবিষ্যৎ—সবই অনিশ্চয়তায় ভরে উঠেছে।

পাকিস্তান সরকার দাবি করছে, কিছু অভিবাসী নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন—এই অবস্থান মূলত নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা। বরং পাকিস্তানই বহু বছর ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা বাড়িয়েছে।

আফগানিস্তানের বর্তমান ‘ইসলামি ইমারত’ সরকার জানিয়েছে, তারা দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে এবং আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের মতে, পাকিস্তানের এই আচরণ বরং নতুন করে অস্থিরতা ডেকে আনছে, যা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যারা যুদ্ধ ও বিপর্যয় থেকে পালিয়ে শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক জীবন গড়তে চেয়েছিল, তাদের ওপর এই নিষ্ঠুরতা শুধু রাজনৈতিক নয়—এটি মানবতা, ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নির্মম লঙ্ঘন।

তবে ইতিহাস বলে, অবিচার কখনো চিরস্থায়ী হয় না। আজ যারা নিপীড়িত, কাল তাদের আত্মত্যাগই হয়ে উঠবে মর্যাদা ও সম্মানের প্রতীক। আর পাকিস্তানের এই দমননীতি ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা