ভারতে মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বিস্তৃত করতে লোকসভায় একটি বিতর্কিত বিল পাস হয়েছে। ইসলামিক ওয়াকফ আইন সংশোধনের এই খসড়া বিলটি উত্থাপন করেছে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। ২৮৮ ভোটের বিপরীতে ২৩২ ভোটে এটি লোকসভায় পাস হয়।
লোকসভায় পাস হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিলটি রাজ্যসভাতেও অনুমোদন পায়। এখন শুধু প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরের অপেক্ষা। স্বাক্ষর হলেই ৭০ বছরের পুরনো ওয়াকফ আইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তিত হবে।
প্রথম থেকেই এই আইনের বিরোধিতা করে আসছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলটির শীর্ষ নেতা ও সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, ‘এই বিলটি মুসলিমদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার একটি অস্ত্র।’
এর আগেও ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইন সংশোধনের মাধ্যমে মুসলিমদের সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল ভারত সরকার।
নতুন আইনটির ফলে ধর্মীয়, শিক্ষামূলক এবং দাতব্য কাজে ব্যবহৃত মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তিতে সরকারের হস্তক্ষেপ ও তদারকি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি এইসব জমিতে ‘অবৈধ অনুসন্ধান ও হস্তক্ষেপের’ ক্ষমতা পাবে সরকার— এমন ধারণা থেকেই তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
এর প্রতিবাদে সরব অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। ২৪ মার্চ ২০২৫ থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া জাতীয় পর্যায়ের আন্দোলন এখনো চলছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিক্ষোভ কর্মসূচি।
ভারত ভাগের পর ১৯৪৮ সালে ভারত সরকার ‘
‘ওয়াকফ আইন ১৯৫৪’ প্রণয়ন করে। এতে ইসলামিক ওয়াকফ সম্পত্তিগুলোকে তাদের ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে ছিল কবরস্থান, পথযাত্রীদের সহায়তা, অবসরপ্রাপ্তদের সেবা, বিচারক, ইমাম ও খতিবদের জন্য নির্ধারিত ওয়াকফ এবং আত্মীয়স্বজনদের জন্য করা ওয়াকফ।
আইন কার্যকর হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার সব রাজ্য সরকারকে মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনায় নীতিমালা অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল মসজিদ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং দাতব্য সংস্থা।
১৯৬৪ সালে গঠিত হয় ‘কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল’। এটি ভারত সরকারের অধীনে একটি আইনি সংস্থা হিসেবে কাজ করে। এর দায়িত্বে রয়েছে দেশের সব ওয়াকফ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান, ব্যবস্থাপনা, রেজিস্ট্রেশন এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
২০১৩ সালের সংশোধনীতে এই কাউন্সিলের ক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়। একইসঙ্গে রাজ্যভিত্তিক ওয়াকফ কাউন্সিলগুলোকেও সক্রিয় ও কার্যকরভাবে পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০০৪ সালে বিচারপতি রাজিন্দর সাচারের নেতৃত্বে গঠিত সাচার কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে নিবন্ধিত ইসলামিক ওয়াকফ চুক্তির সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এই সম্পত্তির মোট আয়তন ৬ লাখ একরের বেশি এবং বাজারমূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার।
তবে বাস্তবে এসব সম্পত্তি থেকে বছরে আয় মাত্র ২৭ মিলিয়ন ডলার। সাচার কমিটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সম্পদের বার্ষিক সম্ভাব্য আয় হতে পারত ২ বিলিয়ন ডলারের সমপর্যায়ের।
সূত্র: আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি, অন্যান্য সংবাদ সংস্থা











