ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় খাদ্য ও জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ রেখে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তার লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের সময় আরও বাড়ানো এবং অধিকসংখ্যক বন্দি মুক্তি দিতে হামাসকে বাধ্য করা। তবে, হামাস অভিযোগ করেছে ইসরায়েল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে এবং সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
হামাসের শীর্ষ নেতা মাহমুদ মারদাওয়ি জানিয়েছেন, তারা তিন ধাপে বিভক্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং প্রথম ধাপের সব শর্ত পালন করেছে। কিন্তু ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রদান ও নির্ধারিত সময়ে বন্দি বিনিময়ের শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই, কোনোভাবেই ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে না, যতক্ষণ না একটি পূর্ণাঙ্গ বন্দিবিনিময় চুক্তি হয়।’
হামাসের আরেক নেতা মুশির আল-মাসরি বলেন, ‘ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির একমাত্র পথ হলো একটি সামগ্রিক চুক্তি, যা শান্তি প্রতিষ্ঠা, গাজার পুনর্গঠন ও বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।’
তিনি জানান, হামাস ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং গাজার পুনর্গঠনে সম্মিলিত দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না কেউ কোনো অজুহাত দেখিয়ে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করুক।’
হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড সম্পর্কে মাসরি বলেন, ‘এই বাহিনী শূন্য থেকে গড়ে উঠেছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সফল আঘাত হেনেছে। তারা পুনরায় নিজেদের শক্তি ও সামরিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক ওয়াসেম আফিফা মনে করেন, হামাস বুঝতে পেরেছে নেতানিয়াহু কৌশলগতভাবে সময়ক্ষেপণ করছেন। তাই হামাসও সামরিক উত্তেজনার হুমকি, কূটনৈতিক চাপ ও কৌশলগত দরকষাকষির মাধ্যমে ইসরায়েলকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে চাইবে।
তিনি বলেন, হামাস আন্তর্জাতিক মহলে গাজার মানবিক সংকট তুলে ধরে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় আলোচনার অচলাবস্থা দূর করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে।
আফিফা আরও বলেন, ‘ইসরায়েল যদি তার অনড় অবস্থান বজায় রাখে, তবে হামাস আলোচনার প্রক্রিয়া বন্ধের হুমকি দিতে পারে, যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় চাপ সৃষ্টি করবে।’√বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি ও বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে জনমত কাজে লাগিয়ে হামাস নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারে। তবে, যুদ্ধের হুমকি বজায় থাকলেও এটি ইসরায়েলের জন্য নতুন কোনো অর্জন আনতে পারবে না, বরং ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে।
সূত্র: আল-জাজিরা