মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজা উপত্যকা দখলের হুমকি দিয়েছেন, যা বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর এই মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্প হয়তো ভুলে গেছেন আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা, যেখানে দুই দশকের যুদ্ধের পরও আমেরিকা কিছুই অর্জন করতে পারেনি।
গাজা উপত্যকা দখলের কথা বললেও ট্রাম্প কি ভুলে গেছেন কাবুল বিমানবন্দরের সেই বিশৃঙ্খলার কথা, যখন মার্কিন বাহিনীকে রাতের অন্ধকারে পিছু হটতে হয়েছিল? বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানে বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধের পরও মার্কিন সেনারা সেখানে বিজয় অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বরং হাজারো স্থানীয় সহযোগীকে ফেলে রেখে, তড়িঘড়ি করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
তাহলে কি ট্রাম্প মনে করছেন, গাজা দখল করা আফগানিস্তানের চেয়ে সহজ হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তান যদি আগ্রাসীদের জন্য ‘সমাধিস্থল’ হতে পারে, তাহলে গাজাও কম নয়। গাজার জনগণ বহুদিন ধরে দখলফার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। বারবার সংঘাতের পরও তাদের মনোবল ভাঙেনি, বরং প্রতিরোধ আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ইতিহাস বলছে, গাজা কখনোই সহজে দখল করা যায়নি। প্রতিটি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গাজার জনগণ কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আফগানিস্তানের উদাহরণ টেনে বিশ্লেষকরা বলছেন, হিন্দুকুশ পর্বতের দুর্গম এলাকা কিংবা তোরা বোরার গুহায় যেমন মার্কিন বাহিনী তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল, তেমনই গাজাতেও তাদের একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প আফগানিস্তানে তালেবানদের ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী পরাজিত হয়ে আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয়। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, শুধুমাত্র সামরিক শক্তি দিয়ে কোনো জাতির সংগ্রামী চেতনাকে দমন করা সম্ভব নয়।
গাজা কেবল একটি ভূখণ্ড নয়; এটি এখন প্রতিরোধের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি আগ্রাসন ও মার্কিন সমর্থনের মুখেও গাজার জনগণ আত্মসমর্পণ করেনি। তাদের প্রতিরোধ কেবল সশস্ত্র লড়াই নয়, এটি গোটা জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার জনগণ ন্যায়সঙ্গত অধিকারের জন্য লড়াই করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের দিক থেকেও সমর্থিত।
সম্প্রতি গাজায় আহত এক ইসরায়েলি সেনা এবং আফগানিস্তানে পা হারানো মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ব্রায়ান মাষ্টের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ছবি মনে করিয়ে দেয় যে আগ্রাসন কখনোই শান্তি বয়ে আনে না, বরং পরাজয় এবং লজ্জা ছাড়া আর কিছুই দেয় না।
গাজা বরাবরই ইসলামী ও ফিলিস্তিনি ভূমি হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস সাক্ষী, কোনো আগ্রাসী শক্তি কখনোই গাজার জনগণকে দমাতে পারেনি। বরং প্রতিটি আক্রমণেই তাদের প্রতিরোধ আরও শক্তিশালী হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমমনা ব্যক্তিদের জন্য এটি বড় শিক্ষা হতে পারে যে, গাজা কখনোই দখলদারদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না, যেমনটা আফগানিস্তানও করেনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকি কেবলমাত্র রাজনৈতিক উসকানি। বাস্তবতা হলো, গাজার জনগণ বহুবার অবরোধ, যুদ্ধ, ক্ষুধা এবং সংকট মোকাবিলা করেও টিকে আছে। তাদের মনোবল ভাঙা সম্ভব নয়, বরং তারা প্রতিটি আঘাতে আরও শক্তিশালী হয়েছে।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইতিহাসের শিক্ষা ভুলে গেলে পরিণতিও ভুল হবে। আফগানিস্তান যেমন আগ্রাসীদের পরাজয় দেখেছে, তেমনই গাজাও যে কোনো আগ্রাসী শক্তির জন্য অনিশ্চিত পরিণতি বয়ে আনতে পারে। অতীত থেকে শিক্ষা না নিলে একই ভুল বারবার করার আশঙ্কা থেকেই যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের হুমকি শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে গিয়ে গাজা দখলের চিন্তা শুধু অযৌক্তিকই নয়, বিপজ্জনকও বটে। ইতিহাসের শিক্ষা হলো, যোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দিয়ে কোনো ভূখণ্ডের ওপর স্থায়ী আধিপত্য কায়েম করা সম্ভব নয়। তাই ট্রাম্পের উচিত অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।