মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমাধান কি ফিলিস্তিন ইস্যুর মাঝেই, যা ভাবছেন বিশ্লেষকরা

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমাধান কি ফিলিস্তিন ইস্যুর মাঝেই, যা ভাবছেন বিশ্লেষকরা
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমাধান কি ফিলিস্তিন ইস্যুর মাঝেই, যা ভাবছেন বিশ্লেষকরা।

ফিলিস্তিন ইস্যুটি দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও জটিল সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালালেও এই ইস্যু তাদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতিমধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিলিস্তিন ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে কোনো স্থায়ী শান্তি আনা সম্ভব নয়।

মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের ভূমিকা

পর্যবেক্ষকদের মতে, ফিলিস্তিন ইস্যু যে কোনো সমাধানের মূল চাবিকাঠি। সৌদি আরবের ফোরাম অব এক্সপার্টসের প্রধান আহমেদ আল-শেহরি সম্প্রতি ‘স্কাই নিউজ আরবিয়া’-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে তার নিজের ভূখণ্ডে পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান না করলে টেকসই শান্তি অর্জন করা অসম্ভব।’

শেহরি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্বহীন কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ কেবল বিভক্তি বাড়াবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করা এবং শান্তি আলোচনা শুরু করার ক্ষেত্রে তাদের মুখ্য ভূমিকা নিশ্চিত করা।’

সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ: সম্ভাবনা নাকি সংকট?

ট্রাম্পের শাসনামলে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। কয়েকটি আরব দেশ ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে, এবং সৌদি আরবকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। তবে সৌদি বিশেষজ্ঞ আহমাদ আশ-শেহরি মনে করেন, ইসরায়েলের বর্তমান সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র নীতিমালা, সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে।

শেহরি বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকারের পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখা এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর দমনপীড়ন যে কোনো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।’

মার্কিন লেখক থমাস ফ্রিডম্যান এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি জোট গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। তার মতে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে এমন একটি জোট মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আমূল বদলে দিতে পারে।

দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান: বাস্তবতা নাকি কল্পনা?

দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ধারণা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমর্থন পেলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এটি নানা বাধার সম্মুখীন। ট্রাম্প ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তবে নেতানিয়াহু সরকার অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছে এবং পাশাপাশি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যেকোনো ফলপ্রসু আলোচনা বাঁধাগ্রস্ত করছে।

আহমাদ আশ-শেহরি সতর্ক করে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার উপেক্ষা করা অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্য চিরকাল অস্থিরতার মধ্যে থাকবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি না হলে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি ন্যায্য সমাধান নিশ্চিত না হলে এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব।’

মার্কিন ভূমিকা: নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী নাকি পক্ষপাতিত্ব ?

মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেক বিশ্লেষক। আহমাদ আশ-শেহরি মনে করেন, আমেরিকার উচিত একটি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একপেশে সমর্থন তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করছে।’

এদিকে, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এক মন্তব্যে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ছাড়া হামাসকে দমন করা সম্ভব নয়।’ তার মতে, ‘ফিলিস্তিনিদের জন্য ভবিষ্যৎ নিশ্চিত না করলে এই অঞ্চল অনন্ত সংঘাতের পথে থাকবে।’

গাজা ও পশ্চিম তীর: সংঘাত ও সংকটের জটিলতা

গাজা ও পশ্চিম তীর মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। গাজা উপত্যকায় সাম্প্রতিক সংঘাতের পর একটি অস্থায়ী স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। তবে পশ্চিম তীরে উত্তেজনা এখনও তীব্র।

ইসরায়েলের ‘আয়রন ওয়াল’ নামের সামরিক অভিযান পশ্চিম তীরেও শতাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটিয়েছে। আহমাদ আশ-শেহরি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকারের এই নীতিগুলো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বসতি স্থাপন অব্যাহত থাকলে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর দমনপীড়ন চলতে থাকলে শান্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে।’

ফিলিস্তিন ইস্যু সমাধানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তবে এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি সবার অঙ্গীকার প্রয়োজন। পক্ষপাতমূলক নীতি বা বিভাজনের রাজনীতি এই সমস্যাকে কেবল আরও গভীর করবে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা