মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সিরিয়ায় তুরস্কের উপস্থিতি, বিপাকে ইসরায়েল

সিরিয়ায় তুরস্কের উপস্থিতি, বিপাকে ইসরায়েল
সিরিয়ায় তুরস্কের উপস্থিতি, বিপাকে ইসরায়েল। ছবি : আল জাজিরা

সিরিয়ার রাজনৈতিক মেরুকরণ ও সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রে মুখোমুখি এখন ইসরায়েল ও তুরস্ক। বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের উদ্বেগ বাড়ছে ক্রমাগতভাবে, বিশেষ করে সিরিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের কারণে। তুরস্কের ভূমিকা ও ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নতুন করে প্রশ্ন তুলছে—সিরিয়ার এই সংকট কি বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নেবে?

ইসরায়েলের আশঙ্কা
বাশার আল-আসাদের পতনের পরদিনই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে হামলে পড়েছে। দামেস্কের নিকটবর্তী জাবাল আশ-শাইখের নতুন কিছু মালভূমি তারা দখল করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানায়, আসাদের পতনের এক মাস পর ইসরায়েলের একটি বিশেষ কমিটি ‘নাগেল’ সিরিয়া-তুরস্ক সম্ভাব্য জোট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

কমিটি মনে করে, সিরিয়া ও তুরস্কের এই জোট ইরানের চেয়েও বড় হুমকি হতে পারে। তুরস্কের উসমানীয় প্রভাব পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা ইসরায়েলের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য তৈরি করতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি। এ কারণে ইসরায়েলকে সরাসরি তুরস্কের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকার সুপারিশ করেছে উক্ত কমিটি।

আসাদের আকস্মিক পতন ইসরায়েলের গোয়েন্দা বিভাগের লজ্জাজনক ব্যর্থতাকে নগ্নভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। ইয়েদিওথ আহরনোথের বিশ্লেষক রনেন বার্গম্যান ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দাদের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা আসাদের পতন পূর্বানুমান করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল একটি কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল বটে। যার মাধ্যমে সিরিয়াকে তিনটি অংশে বিভক্ত করার চেষ্টায় ছিলো ইসরায়েল । পরিকল্পনা অনুযায়ী—

১. আসাদ দামেস্কে ক্ষমতা ধরে রাখবে।

২. উত্তর-পূর্বে একটি কুর্দি অঞ্চল গড়ে উঠবে।

৩. দক্ষিণে একটি দ্রুজ অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরান ও হিজবুল্লাহর প্রভাব কমানো এবং তুরস্কের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ রোধ করা। কিন্তু আসাদের আকস্মিক পতনে মাঠে মারা যায় এই পরিকল্পনা। ফলে, পাগলা কুকুরের মত ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে ব্যাপক হামলা চালায়। এর মাধ্যমে হয়তো ইসরায়েল আগাম উদ্বেগ প্রশমিত করার চেষ্টা করেছে।

এসডিএফ সঙ্গে ইসরায়েলের যোগাযোগ

আসাদের পতনের দুই সপ্তাহ পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সিরিয়ার গণতান্ত্রিক পার্টির (এসডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। তারা এসডিএফকে অ-সামরিক উপায়ে সহায়তার প্রস্তাব দেয়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির সিরিয়াকে প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি ইসরায়েলি বিশ্লেষক ইদো লেভি যুক্তরাষ্ট্রকে এসডিএফকে সমর্থন অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। তার মতে, এসডিএফের সমর্থন অব্যাহত রাখলে তুরস্ক-সমর্থিত বাহিনী ও হাইয়াত তাহরির আশ-শামকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

এসডিএফ নেত্রী ইলহাম আহমদ ইসরায়েলের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রকে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার না করার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তবে এদিকে এসডিএফের ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ তুরস্কের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তুরস্কের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের সহযোগিতামূলক হস্তক্ষেপের কারণে তুরস্ক সিরিয়ার অভ্যন্তরে এসডিএফের অবস্থানে বিমান হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে। বিশেষত, মঞ্জিব এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে রাক্কার দিকে এগোনোর চেষ্টা করছে তুরস্ক।

ইসরায়েলি সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে সতর্কতা উচ্চারণ করেছে তুরস্ক। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, সিরিয়ায় ইসরায়েলের দখল কার্যক্রম উত্তর সীমান্তে তুরস্কের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। তবে সামরিক সংঘাত এড়াতে তুরস্ক কূটনৈতিক উপায়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে।

আমেরিকার ভূমিকা ও সম্ভাব্য সমাধান

নতুন মার্কিন প্রশাসন সিরিয়ার পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য না দিতে পরামর্শ দিয়েছে।

তুরস্ক ও ইসরায়েল আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকার ওপর।

সিরিয়ায় বর্তমান উত্তেজনা তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ককে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চললেও সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এর সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা