মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

কাবুনের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা এক পরিবারের গল্প

কাবুনের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা এক পরিবারের গল্প
কাবুনের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা এক পরিবারের গল্প। ছবি : আনাদোলু

দামেস্কের প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাবুন এলাকা একসময় সিরিয়ার অন্যতম প্রাণবন্ত ও জনবহুল অঞ্চল ছিল। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত এলাকাটি সেলাই শিল্প এবং প্রায় এক লাখ বাসিন্দার জন্য বেশ পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে কাবুন একটি ধ্বংসস্তূপ মাত্র— যা আসাদ শাসনের নৃশংসতা ও সিরিয়ানদের স্বাধীনতাবসংগ্রামের জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কাবুনসহ আশপাশের এলাকায় এখনো কয়েকটি পরিবার ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের মাঝে ফিরে এসে বসবাস শুরু করেছে। এমনই একটি পরিবার মারি পরিবার, যারা তিন প্রজন্মের সদস্যদের নিয়ে বাড়ির শেষ ভগ্নস্তূপে বসবাস করছে।

মারি পরিবারের প্রধান ৫৮ বছর বয়সী সাইমার মারি জানান, তিনি আশির দশকে আলেপ্পো থেকে কাবুনে এসেছিলেন। একসময় এলাকাটি ছিল জীবন-জীবিকার কেন্দ্রস্থল। তিনি বলেন, ‘সেলাই বাজার ছিল চঞ্চল, সবাই সুখে ছিল। কিন্তু যুদ্ধ আমাদের ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। এখন এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’

সাইমার জানান, ২০১২ সালে তার এক ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বহু চেষ্টা করেও তার সন্ধান পাননি। ২০১৬ সালে তিনি এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। ২০২১ সালে ফিরে এসে দেখেন তার চারটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি বাড়ি মেরামত করে এখন সেখানেই তার স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করছেন।

তিনি আরও জানান, তার ছেলে ফারাস সিদনায়া কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। আরেক ছেলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারান।

ধ্বংসের এই ভয়াবহতার মধ্যেও এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের হাসি জীবনের নতুন আশার কথা বলে। ধ্বংসস্তূপে খেলতে থাকা শিশুদের দেখে মনে হয়, জীবনের প্রতি তাদের বিশ্বাস এখনো অটুট।

মারির নাতি মোহাম্মদ—যার বয়স এখন ২২ বছর— জানান, আসাদের শাসন তার শৈশব ও তারুণ্য কেড়ে নিয়েছে। জীবনের বেশিরভাগ সময় সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ থেকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। এখন আমি নতুন করে জীবন শুরু করছি। আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি এখনো আশা আছে।

উল্লেখ্য গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী দামেস্কসহ বেশ কয়েকটি শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় ৬১ বছরের বাথ পার্টির শাসন এবং আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের স্বৈর শাসনের অবসান ঘটে।

কাবুনের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনগুলো যুদ্ধের নৃশংসতার স্মৃতি বহন করছে। কিন্তু এখানকার মানুষের প্রত্যয়ী মনোভাব ও শিশুদের হাসি সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য নতুন আশার কথা বলছে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা